সিলেট [english_date] | [bangla_date]
প্রকাশিত: 4:11 PM, October 19, 2019
অনলাইন ডেস্কঃ বিদেশগামীদের সাথে হচ্ছে ভয়াবহ প্রতারণাসাউথ সুরমা ডেস্ক: সিলেটে মেডিকেল চেকআপের নামে বিদেশগামী মানুষের সাথে চলছে ভয়বহ প্রতারণা। স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে হয়রানি চলছে জিসিসি অনুমোদিত রোগ নির্ণয় কেন্দ্রেই। এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিদিন শত শত মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে এ অব্যবস্থা চললেও সংশ্লিষ্টদের টনক নড়ছে না। মোটা অঙ্কের ফি নিয়েও এসব প্রতিষ্ঠান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ব্যতিরেকেই বিদেশ গমনের স্বাস্থ্যসনদ ইস্যু করছে বলে জানা যায়। এক কথায়, ‘টাকা ঢাললে সুস্থ, অন্যথায় অসুস্থ।’
অনুসন্ধানী এক প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যেতে হলে শ্রমিকদের জিসিসি অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে মেডিক্যাল চেকআপ করাতে হয়। আর সিলেটে জিসিসি অনুমোদিত ১০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
মেডিকেল টেষ্টের জন্য প্রথমে স্লিপ সংগ্রহ করতে হয়। রক্তের এইচআইভি, ইউরিন, জন্ডিসসহ পরীক্ষারগুলোর জন্য জনপ্রতি দিতে হয় সাড়ে ৮ হাজার টাকা দিতে হয়। মহিলা শ্রমিকদের জন্য প্রেগনেন্সি টেস্টের জন্য কিছু টাকা বাড়তি দিতে হয়। টাকা বুঝে নেবার পর তাদের নির্ধারিত ডায়গনস্টিক সেন্টারের টোকেন ধরিয়ে দিয়ে টেষ্ট করিয়ে আনতে বলা হয়।
সুত্রে জানা গেছে, সিলেট নগরীতে মেডিকেল টেষ্টকে ঘিরে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের কাছে নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বিদেশগামী শ্রমিকরা। সময় মতো রিপোর্ট না পাওয়ায় অনেকের ভিসার মেয়াদও চলে গেছে।
আবার অনেকে ভিসার মেয়াদ কম থাকায় বাধ্য হয়ে দালাল কিংবা মেডিকেল সেন্টারগুলোর কর্মকর্তা কর্মচারীদের আশ্রয় নিচ্ছেন। তাই নিরুপায় হয়ে তাদের কথা মতো বাড়তি টাকা দিয়ে পজেটিভ রিপোর্ট নিচ্ছেন। মেডিকেল সেন্টারের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাছে প্রতিনিয়ত প্রতারিত শিকার হচ্ছেন বিদেশগামী শ্রমিকরা।
অভিযোগ আছে, যে পরীক্ষাগুলো করাতে দেড়-দুই হাজার টাকার বেশি লাগার কথা নয়, সেখানে ৮ হাজার থেকে দশ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলেই সুস্থ ব্যক্তিদের অসুস্থ বানিয়ে দেন।
বলা হয় আপনার লাংসে স্পট, ইনফেকশন হয়ে গেছে। আবার বেশির ভাগ লোকদের বলা হয় বুকের মধ্যে দাগের কথা। মেডিকেল সেন্টারের নিয়োগকৃত দালাল বলে, টাকা দেন ঠিক করে দেই। টাকা না দিলে ‘আনফিট’ দেখিয়ে অনলাইনে রিপোর্ট দেয়া হবে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দালাল, নিরাপত্তা প্রহরী টাকার মিনিময়ে সিরিয়াল দিচ্ছেন। এদের হাতে টাকা দিলে সিরিয়ালের প্রয়োজন পড়ে না। সিরিয়াল ছাড়াই লোক ভিতরে ঢোকায়।
ফলে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাড়িয়ে থাকা লোকজনের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। প্রতিটা সেন্টারেই রয়েছে সিন্ডিকেট সদস্যদের অবাধ পদচারণা। তাদের সাথে রয়েছে অফিসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবৈধ লেনদেন। তাদের কাছে বিদেশ যাত্রীরা একপ্রকার জিম্মি হয়ে পড়েছেন।
অনুসন্ধানে মিলেছে শ্রমিকদের মেডিক্যাল চেকআপের নামে নানা অনিয়মের অভিযোগ। তাতে এক পর্যায়ে তথ্য আসে আনোয়ার (ছদ্মনাম) ওই ব্যক্তি সৌদী আরবে যাওয়ার জন্য ১৫ সেপ্টেম্বর মেডিকেল টেষ্টের জন্য যান নগরীর উপশহরের ই ব্লকে অবস্থিত সিলেট সিটি মেডিকেল সেন্টারে। তার আইডি কোড নাম্বার- ১৯- ঝঅ-… ৯। মেডিকেল টেষ্ট শেষে তাকে বলা হয় এক সপ্তাহ পর রিপোর্ট নিতে।
দো’তলা থেকে নীচে আসতে অপরিচিত একজন বললেন, ভাই আগে থেকেই লাইন করেন, পরে পস্তাতে হবে। রাখেন আমার মোবাইল নাম্বার দরকার হলে ফোন দিয়েন। আনোয়ার তিনদিন পর রিপোর্ট আনতে যান সিটি মেডিকেল সেন্টারে। কর্তৃপক্ষ রিপোর্টের কপি হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, আপনার রিপোর্ট নেগেটিভ।
এরপর আনফিট বলে সিল মেরে দিয়ে দেয়। তখন রিসিপশনের ওই ব্যক্তি বলেন, রিপোর্টটি অনলাইনে দেওয়া হবে। আর অনলাইনে না দিলে একটি দরখাস্তসহ খরচপাতি দিতে হবে। এরপর তিনি ৩ হাজার টাকাসহ একটি দরখাস্ত দিলে অনলাইনে দেয়া বন্ধ রাখা হয়।
অফিস থেকে বেরিয়ে এসে এক লোকের সাথে কথা হয় আনোয়ারের। তখন ওই ব্যক্তি আনোয়ারকে বলেন, ১০ হাজার টাকা দিলে এই মুহূর্তে ফিট রিপোর্ট দিতে পারবো। এরপর দুজনের কথাবার্তায় ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ হলে ওই দালালের মাধ্যমে এক ঘন্টার মধ্যে ফিট রিপোর্ট নিয়েছেন সিলেট সিটি মেডিকেল সেন্টার থেকে।
স্বাস্থ্য পরীক্ষায় হয়রানির শিকার সিলেটের বিয়ানীবাজারের আরেক যুবক। তিনি নগরীর জেবি মেডিকেল সেন্টারে প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বশেষ বাড়তি টাকা দিয়ে মেডিক্যাল চেকআপের ছাড়াই ফিট সার্টিফিকেট নেন তিনি। বিনিময়ে তাকে গুণতে হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। রিপোর্টটি সিটি মেডিকেল সেন্টার থেকে এ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেন।
শুধু তারাই নন, স্বাস্থ্য পরীক্ষায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্যগামীরা। সবকিছু ঠিক থাকার পরও অসুস্থ দেখিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, আবার রোগ থাকা সত্বেও টাকার বিনিময়ে মেডিকেল ফিট রিপোর্ট দেয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। যা স্বীকারও করেন দালালদের কেউ কেউ।
ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, এ ধরণের হয়রানির কারণে অনেকের ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে যায়। অথচ এই ভিসা বের করতেও কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়েছে। অনেকে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার ভয়ে সংশ্লিষ্ট ডায়গনস্টিক সেন্টারের সাথে সমঝোতা করে চাহিদামত টাকা পরিশোধ করে রির্পোট নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
আনফিট হওয়া ব্যক্তি প্রসঙ্গে সিলেট সিটি মেডিকেল সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার অলিউর রহমান তাপস বলেন, অফিসিয়ালি তার কোন রোগ নয়। বুকের মধ্যে সামান্য দাগ রয়েছে। এগুলো কিছুদিন বিশ্রাম দিলে ঠিক হয়ে যায়।
তবে টাকা লেনদেনের মাধ্যমে রিপোর্টের বিষয়ে তিনি কথা বলতে নারাজ। তিনি বলেন, মেডিকেল করা ছাড়া ফিট কার্ড নেয়া একেবারেই অসম্ভব। তবে দালাল চক্রের কিছু লোক এই ধরণের ফিট কার্ড আমাদের নামে তাদের দিয়ে দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে র্যাব-৯ এর মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বিদেশগামী শ্রমিকদের মেডিকেল চেকআপের নামে প্রতারণার তথ্য বা অভিযোগ আমাদের কাছে এখনও আসেনি। র্যাবের পক্ষ থেকে খোঁজ নিয়ে পরবর্তীতে এ্যাকশনে যাওয়া হবে। তথ্যসূত্র: দৈনিক জালালাবাদ।
সম্পাদক-প্রকাশক :
মো: মিজানুর রহমান।
সম্পাদকীয় কার্যালয়:
পৌর মিনি মার্কেট (২য় তলা). ডিএস রোড সুনামগঞ্জ।
মোবাইল : ০১৭১৬-৫৬৩১৬৮
ইমেইল : mizan.sunam@gmail.com
ওয়েব সাইট: www,sunamnews24.com