তাঁত কারিগর মমতাজের সাফল্য

প্রকাশিত: 1:01 AM, May 10, 2016

তাঁত কারিগর মমতাজের সাফল্য

ইয়াসমিন পিউ, নরসিংদী :: “আগে অন্যের তাঁত কলে কাজ করতাম। সেটা ১৯৮৩ সালের কথা। তখন আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই মানুষের কারখানায় কাজ করতাম। সংসারে অভাব লেগেই থাকতো। ছেলে-মেয়েদের সাধ-অহ্লাদ কোনোদিন পূরণ করতে পারি নাই…। পরে ১৯৮৮ সালের দিকে একটি হস্তচালিত তাঁতকল মাঝে মাঝে ভাড়ায় নিয়ে কাজ করতাম। এভাবে আস্তে আস্তে টাকা জমিয়ে একটি পুরনো তাঁতকল কিনি। এরপর ১৯৯৮ সালে ড্যাম ফাউন্ডেশন ফর ইকোনোমিক ডেভলপমেন্ট (ডিএফইডি) প্রকল্পের ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির সাথে সম্পৃক্ত হই। সেখান থেকে প্রথমে ৩ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে কাজ শুরু করি। প্রথমে ছোট্ট একটি ঘরে একটিমাত্র মেশিন দিয়ে কাজ শুরু করি। এভাবে বছর বছর ঋণ বাড়িয়ে তাঁতকল বাড়াতে থাকি। এ কাজে আমাকে সবসময় সহযোগিতা করেছে আমার স্বামী আবু সাঈদ (৫৮)।”- নরসিংদী সদরের নূরালাপুর গ্রামের বাসিন্দা মমতাজ বেগম (৫৩) এভাবেই তার সাফল্যের গল্প বলছিলেন।

বর্তমানে মমতাজ বেগমের ২০টি তাঁতের হস্তচালিত মেশিন রয়েছে। তার কারখানার অধিকাংশ মেশিনই পুরনো। প্রতিটি তিনি কিনেছেন ১০ হাজার টাকায়। নতুন একটি মেশিন তৈরি করতে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ পড়ে। তবে নতুন মেশিন পুরনো মেশিনের মতো টেকসই নয় বলে জানান তিনি। মমতাজ বেগম বলেন, বেশিরভাগ কারখানায় পুরনো মেশিনই ব্যবহূত হয়। একেকটি হস্তচালিত তাঁতকল মেশিনের বয়স ১০০ বছরের উপরে। মমতাজ বেগমের কারখানার উত্পাদিত গামছা যাচ্ছে রংপুর, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুরসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

মমতাজ বেগম তার দুই মেয়ে শারমিন ও সাহিদাকে ভালো ঘরে বিয়ে দিয়েছেন। সাহিদাকে কলেজ পর্যন্ত পড়িয়েছেন। ছেলে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে ব্যবসায় সহযোগিতা করছেন। ছেলে শাহীনের বিয়ের জন্য পাত্রীও ঠিক করেছেন; খুব শিগগিরই বিয়ে। মমতাজের ভিটায় টিনের ভাঙাচোরা বাড়ি আর নেই, সেখানে এখন ৩ তলার ফাউন্ডেশন দিয়ে ভবন তুলছেন তিনি। সব মিলিয়ে মমতাজ বেগম আজ জীবন সংগ্রামে জয়ী একজন সফল নারী।

মমতাজ বেগম জানান, বর্তমানে প্রায় ২৫ শতাংশ জমির উপরে তাঁতের কারখানা তার। তিনি জানান, পাইকাররা বাড়িতে এসে তার তৈরি গামছা কিনে নিয়ে যান। অন্যান্য কারখানার চেয়ে তার গামছার কারুকাজে কিছুটা ভিন্নতা থাকায় চাহিদাও বেশ। কারখানায় প্রতিদিন ২০ রঙের গামছা তৈরি হয়। মমতাজ এই গামছা থান হিসেবে বিক্রি করেন। ১ থানে ৪টি গামছা থাকে। প্রতি থান ১৫০ টাকা। একজন শ্রমিক প্রতিদিন ৬ থান গামছা তৈরি করেন। মমতাজ বেগমের কারখানার অধিকাংশ শ্রমিকই স্থানীয়।

তাঁতের ব্যবসায় সফল হতে কী করতে হবে সে বিষয়ে এলাকার অনেকেই পরামর্শ নেন মমতাজের কাছে। ডিএফইডি প্রকল্পের নরসিংদী এলাকার ম্যানেজার মো. তোফাজ্জল হোসেন একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে মমতাজ বেগমের প্রশংসা করে ব্যবসার প্রসারে তাকে আরো বেশি ঋণ প্রদানের সদিচ্ছা ব্যক্ত করেন।

তথ্যসূত্র: ইত্তেফাক

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সংবাদটি 86 বার পঠিত হয়েছে

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ