লক্ষ্য এবার সেমিফাইনাল

প্রকাশিত: 3:52 AM, February 3, 2016

লক্ষ্য এবার সেমিফাইনাল

নামিবিয়াকে ৬৫ রানে গুঁড়িয়ে দিয়ে ৮ উইকেটে জয়। আফ্রিকার দেশটি বাংলার বাঘের সামনে কাগুজে বাঘে পরিণত হয়। টানা তিন জয়ে শীর্ষ থেকেই শেষ যুব বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের খেলা। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই শেষ আট নিশ্চিত হয়েছিল টাইগার যুবাদের। কিন্তু দুই ম্যাচ জিতে আফ্রিকার উঠতি ক্রিকেট শক্তি নামিবিয়া শেষ ম্যাচে আতঙ্ক ছড়াচ্ছিল। বাংলাদেশের মতো তারাও হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও স্কটল্যান্ডকে। দলটির কোচ ও অধিনায়ক পাত্তাই দিচ্ছিল না টাইগারদের। কিন্তু গতকাল মাঠের লড়াইয়ে স্পষ্ট হয়ে যায় দুই দলের শক্তির পার্থক্য। নির্ধারিত সময় অনুসারে কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তুর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম ইনিংস শেষ হওয়ার কথা ছিল দুপুর সাড়ে ১২টায়। কিন্তু তার আগে পুরো ম্যাচই শেষ! টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে নামিবিয়া খেলতে পেরেছে মাত্র ৩২.৫ ওভার। অন্যদিকে ৬৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ২ উইকেট হারালেও বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ জয় তুলে নিয়েছে মাত্র ১৬ ওভার খেলে। এই জয়ে ‘এ’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। আগামী ৫ই ফেব্রুয়ারি শেষ আটে মিরাজ বাহিনীর প্রতিপক্ষ এশিয়ার দুর্বল ক্রিকেট শক্তি নেপাল। যদিও নিউজিল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে দলটি কোয়ার্টার ফাইনালে এসেছে। তবুও আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশের সামনে সেমিফাইনালে যাওয়ার সবচেয়ে সহজ  দরোজাই এখন তারা। কোয়ার্টার ফাইনালের আগেই যেন সেমিতে এক পা দিয়ে রেখেছে মিরাজ বাহিনী। [the_ad id=”253″]
নামিবিয়ার ছুড়ে দেয়া ৬৭ রানের লক্ষ্যটা খুব কঠিন ছিল না। কিন্তু রান তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই পিনাক ঘোষকে হারায় বাংলাদেশ। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে রানের খাতা খোলার আগেই আউট হলেন তিনি। অফ স্টাম্পের বাইরের বল পয়েন্টে ফিল্ডারের হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দেন তিনি। এরপর ৮ রান করে কটবিহাইন্ড আরেক ওপেনার সাইফ হাসান। তখন একটু ভয় ছড়িয়ে গিয়েছিল বললে ভুল হবে না। কিন্তু দলের দায়িত্ব নিতে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান নাজমুল হাসান এলে স্বস্তি ফিরে আসে। সঙ্গে ছিলেন জয়রাজ শেখ ইমনও। এই দুজন তৃতীয় উইকেটে ৫৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলকে পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে। ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন জয়রাজ ও ১৪ রানে শান্ত।
বাংলাদেশ ও নামিবিয়ার ম্যাচটি ছিল ‘এ’ গ্রুপের ফাইনাল। নামিবিয়ার প্রথম দুই ম্যাচের পারফরম্যান্সে ইঙ্গিত ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে শক্ত প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠার। কিন্তু স্পিনের মায়াবি ঘূর্ণিতে কূল-ঠাঁই কোনোটাই খুঁজে পাইনি আইসিসির এই সহযোগী দেশটি। তাদের ৬৫ রানের ইনিংসে মাত্র ২ জন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্ক ছুঁতে সক্ষম হয়েছেন। অবশ্য নামিবিয়াকে গুঁড়িয়ে দেয়ার শুরুটা করেন দুই পেসার আবদুল হালিম ও মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। চতুর্থ ওভারেই দলকে প্রথম উইকেট উপহার দেন সাইফুদ্দিন। তবে তার বলে গালিতে ডান দিকে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত ভঙ্গিতে লফটি-ইটনের ক্যাচ নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। পরের উইকেটিও এসেছে দারুণ এক ফিল্ডিং থেকে। গালি থেকে দারুণ থ্রোতে উইকেট ভেঙেছিলেন আরিফুল ইসলাম, ব্যাটসম্যান তখনও ক্রিজে। কিন্তু রান নিতে ছুটেছিলেন ওভার থ্রোতে। ছুটে গিয়ে উইকেটকিপার জাকির হাসান সরাসরি থ্রোতে আউট করেছেন নামিবিয়ান অধিনায়ক জেন গ্রিনকে। দ্বিতীয় ম্যাচেও জাকির দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিয়েছিলেন উইকেটের  পিছনে।
এরপর নামিবিয়ার ইনিংসের একমাত্র দুই অঙ্কের জুটি এসেছে। তৃতীয় উইকেটে ২৭ রানের জুটি গড়েন নিকো ড্যাভিন ও লোহান লরেন্স। কিন্তু বিধিবাম। দুর্দান্ত এক আর্ম ডেলিভারিতে ড্যাভিনকে ১৯ রানে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন স্পিনার সালেহ আহমেদ শাওন। এখান থেকেই শুরু টাইগার স্পিনারদের মরণ ভেলকি। এরপর কুইকার ডেলিভারিতে মাইকেল ফন লিনজেনকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে যুব ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি উইকেটের রেকর্ড স্পর্শ করেন অধিনায়ক ও স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। বল হাতে নিয়ে প্রথম ওভারেই উইকেট নেন অফ স্পিনার সাঈদ সরকার। তার বলেও মিড উইকেটে আরেকটি ক্যাচ নেন শান্ত। তবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর নায়ক লরেন্স প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন নামিবিয়ার বিপর্যয়ে। কিন্তু নিজের প্রথম ওভারেই সঞ্জিতের পরিবর্তে দলে আসা অফ স্পিনার আরিফুল ইসলাম জনি দ্রুত গতির বলে লরেন্সকে বোল্ড করেন ১৭ রানে।
নামিবিয়াকে গুঁড়িয়ে দিয়ে ছুটে চলা টাইগারদের তখনও একটি উৎসবের অপেক্ষা। অধিনায়ক মিরাজকে শীর্ষে যেতে প্রয়োজন আর মাত্র একটি উইকেট। শেষ উইকেটটি নিয়ে ইনিংস গুটিয়ে দেয়ার পাশাপাশি সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ডটি নিজের করে নেন মিরাজ। যুব ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে এর চেয়ে ছোট ইনিংস আছে আর একটিই। সেটিও নামিবিয়ার। ২০০০ সালে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপে তারা গুটিয়ে গিয়েছিল ৫৭ রানে।
বাংলাদেশের ৬ বোলারের মধ্যে মাত্র দুজন পাঁচ ওভারের ওপরে বোলিং করেছেন। পেসার আবদুল হালিম মেডেন ওভার দিয়ে শুরু করে পাঁচ ওভারে কোনো উইকেট না পেলেও দিয়েছেন মাত্র ১৫ রান। আরেক পেসার সাইফুদ্দিন একই সমান বল খরচ করে ১৫ রান দিয়ে নিয়েছেন একটি উইকেট। স্পিনার আরিফুল ইসলাম পাঁচ ওভারে ৯ রান খরচ করে নিয়েছেন দুই উইকেট। আরেক স্পিনার সাইদ সরকার ২ ওভার  বল করে মাত্র ১ রান দিয়ে নিয়েছেন একটি উইকেট। অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ ৭.৫ ওভার বল করে নিয়েছেন ২টি ও ৮ ওভার বল করে মাত্র ১২ রান দিয়ে ম্যাচসেরা শাওন গাজী নিয়েছেন ২ উইকেট।

[the_ad id=”249″]

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সংবাদটি 91 বার পঠিত হয়েছে

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ