পুলিশও জড়িত এটিএম কার্ড জালিয়াতিতে

প্রকাশিত: 8:29 AM, February 29, 2016

পুলিশও জড়িত এটিএম কার্ড জালিয়াতিতে

094846Mir-Kasem-Ali-(3)এটিএম কার্ড জালিয়াতের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, কিছু ভিআইপি, হোটেল মালিক ও ট্রাভেল এজেন্সীর পাশাপাশি পুলিশের কিছু সদস্যও জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা ডিবি পুলিশ। পুলিশের উত্তরা জোনের গুলশান এলাকায় দায়িত্বে থাকা পুলিশের এক ইন্সপেক্টর ও এক পুলিশ সদস্য এ জালিয়াতের সঙ্গে জড়িত আছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে ডিবি পুলিশ।
পর্যাপ্ত পরিমাণ তথ্য পেলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে পুলিশ কর্তৃপক্ষ বলে মামলার তদন্ত কাজে সম্পৃক্ত এক সূত্র জানিয়েছে। ২০১৫ সালে সিটি ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াত করে ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। এ বিষয়ে সিটি ব্যাংক মামলা দায়ের করেছিল। সেই মামলার এক সূত্রকে কাজে লাগিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি। সে সময় চারশত কার্ডের বেশি তথ্য চুরি করা হয়েছিল বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্র জানায়, দুই পুলিশ সদস্যর মধ্যে এক সদস্য বর্তমানে ঢাকার বাইরে পুলিশের রংপুর রেঞ্জে দায়িত্ব পালন করছেন। এই দুই জনের সঙ্গে আরো কোনো পুলিশ সদস্যর সংশ্লিষ্ঠতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর জন্য রিমান্ডে নেয়া চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যকে কাজে লাগানো হচ্ছে। ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। খুটিয়ে খুটিয়ে দেখা হচ্ছে ছোট ছোট তথ্যকেও।
সূত্র মতে, প্রাথমিকভাবে আন্তর্জাতিক এ চক্রের সঙ্গে জড়িত এমন ৪৫ জনের তালিকা করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ১৭ জন ব্যাংক কর্মকর্তা রয়েছেন। এর বাইরে ব্যবসায়ী, কিছু ভিআইপি, হোটেল মালিক ও ট্রাভেল এজেন্সীর মালিক জড়িত রয়েছে বলে পুলিশ তদন্তে পেয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৬ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি- এই সময়ের মধ্যে ইবিএল, সিটি ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ছয় বুথে স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে কার্ডের তথ্য চুরি করে ক্লোন কার্ড তৈরি করে গ্রাহকদের অজান্তে টাকা তুলে নেয়া হয়। তবে তা জানাজানি হয় ১২ ফেব্রুয়ারি।
২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে নবগঠিত কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান ডিআইজি মনিরুল ইসলাম বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর গুলশানে পিওটরের নিজের বাসা ও বিভিন্ন এলাকা থেকে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পিওটর পুলিশকে জানিয়েছে, একটি আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে জড়িত থেকে দীর্ঘদিন ধরে তারা এই জালিয়াতির কাজ করছে। প্রথমে তারা বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের এটিএম কার্ড ক্লোন করে বুথ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পরে বাংলাদেশিদের এটিএম কার্ড ক্লোন করে বুথ থেকে টাকা সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করে। তাদের সঙ্গে এ কাজে লন্ডন প্রবাসী এক বাংলাদেশি, বুলগেরিয়ার ও ইউক্রেনের একজন করে নাগরিকও জড়িত আছে। সিটি ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের তিন কর্মকর্তাও জড়িত রয়েছে। এই তিন কর্মকর্তার কাছে থাকা পাঞ্চ মেশিন দিয়ে কার্ড ক্লোন করতে ব্যবহার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদের পরে পিওটরের বাসা থেকে ল্যাপটপ, মোবাইলসহ বেশ কিছু জিনিস জব্দ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে পিওটরের স্ত্রীকে। পিওটরের বাংলাদেশি স্ত্রী মেরিনার কাছ থেকে এখন পর্যন্ত বিশেষ কোনো তথ্য পায়নি পুলিশ বলে সূত্র জানিয়েছে।
তথ্য চুরি করে জালিয়াত চক্র চার ব্যাংকের ৩৬ জন গ্রাহকের একাউন্ট থেকে টাকা ২০ লাখ ৬০ হাজার হাতিয়ে নেয় জালিয়াত চক্র। এর মধ্যে ইবিএল এর গ্রাহক সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, এর মধ্যে ইস্টার্ন ব্যাংকের(ইবিএল) ২৪ জন, সিটি ব্যাংকের ৪ জন, ইউসিবিএল’র ৭ জন এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১ জন গ্রাহক তাদের টাকা হারিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে এ সময়ে ১ হাজার ২০০ জন গ্রাহক এই ৬টি বুথ ব্যবহার করেন। তাদের সকলের কার্ড বাতিল করে নতুন এটিএম কার্ড দেয়ার জন্য ব্যাংককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে মামলার তদন্তকারী পুলিশ সদস্যদের মতে এর সংখ্যা কমপক্ষে ৩ হাজারের বেশি হবে। এ বিষয়ে তারা তদন্ত করে চলেছে। – See more at: http://www.sheershanewsbd.com/2016/02/28/118416#sthash.pNlOaGiZ.dpuf

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সংবাদটি 86 বার পঠিত হয়েছে

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ