পুলিশের আরো দুই ‘কাণ্ড’

প্রকাশিত: 4:50 AM, February 17, 2016

পুলিশের আরো দুই ‘কাণ্ড’

094846Mir-Kasem-Ali-(3)প্রান্ত ডেস্ক:পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়েছে অপহরণ মামলার সন্দেহভাজন এক আসামি। অথচ নিজেদের দোষ-ত্রুটি ছাপিয়ে উল্টো এক সিনিয়র ব্রাদারকে পিটিয়ে আহত করেছেন ডিবি পুলিশের তিন সদস্য। গত সোমবার রাতে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। আহত ওই ব্রাদারের নাম আবুল ফজল (৩০)। তাঁকে রাতেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার সকালে ডিবি পুলিশের এএসআই মুশফিকুর রহমান, কনস্টেবল আনোয়ার হোসেন ও ফজলুল হককে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এদিকে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছেন এক পুলিশ সদস্য। আহতের নাম শরিফুল ইসলাম। তাকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত সোমবার রাতে তিয়রবিলা পুলিশ ফাঁড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জড়িত পুলিশ কনস্টেবল বেলাল হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গাজীপুরে গত সোমবার দুপুরে অপহরণ হওয়া দুই ছাত্রকে আহত অবস্থায় রাত ১০টার দিকে উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। এরপর সাড়ে ১০টার দিকে তাদের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ওই দুই ছাত্র অপহরণের মূল পরিকল্পনাকারী রানাকে ও অপহরণ মামলার সন্দেহভাজন এক আসামিকে খুঁজতে থাকে পুলিশ। কিন্তু রানা হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়। এরপর চা খাওয়ানোর কথা বলে জরুরি বিভাগে কর্মরত ব্রাদার আবুল ফজলকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে আসেন ডিবি পুলিশের তিন সদস্য। আবুল ফজল বাইরে যেতে না চাইলে তাঁকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করেন তাঁরা। খবর পেয়ে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আবুল কালাম আজাদ ও সহকর্মীরা এসে আবুল ফজলকে উদ্ধার করেন। হাসপাতালের সরকারি কর্মচারী সম্মিলিত সমিতির সভাপতি ব্রাদার মো. হাবিবুর রহমান জানান, এ ঘটনায় হাসপাতালের নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। রাত থেকেই তাঁরা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেন। খবর পেয়ে গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন-অর-রশীদ গতকাল সকাল ৮টার দিকে আবুল ফজলকে দেখতে হাসপাতালে যান। পরে তিনি সিভিল সার্জন ডা. আলী হায়দারসহ সরকারি কর্মচারী সম্মিলিত সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ডিবি পুলিশের তিন সদস্যকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার এবং সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দেন। পরে নার্স-কর্মচারীরা তাঁদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে গোয়েন্দা পুলিশের এএসআই মুশফিকুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, আসামি রানাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করলে ব্রাদার ফজল তাঁকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন। এ নিয়ে বাগিবতণ্ডা হয়েছে মাত্র। মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আব্দুস সালাম সরকার বলেন, ‘ডিউটি অবস্থায় কোনো সরকারি কর্মচারীকে গ্রেপ্তার বা আটক করতে গেলে কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু ডিবি পুলিশের সদস্যরা তা না করে ব্রাদার আবুল ফজলকে মারধর করেছেন।’ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে পিটিয়ে অজ্ঞান করলেন কনস্টেবল : এদিকে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছেন এক কনস্টেবল। আহতের নাম শরিফুল ইসলাম। তাকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শরিফুল উপজেলার তিয়রবিলা গ্রামের বাগানপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা মওলা বক্সের ছেলে। জানা গেছে, তিয়রবিলা পুলিশ ফাঁড়ির টহলদলকে বহন করতে প্রতি রাতেই পর্যায়ক্রমে এলাকার শ্যালো ইঞ্জিনচালিত অবৈধ আলমসাধু চালকদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। গত সোমবার রাতে শরিফুল ইসলামের দায়িত্ব পড়ে পুলিশের টহলদলকে আলমসাধুতে বহন করা। কিন্তু শরিফুল রাতে আলমসাধু ফাঁড়িতে রেখে বাজারে মশার কয়েল কিনতে যায়। ফিরতে একটু দেরি হওয়ায় পুলিশ কনস্টেবল বেলাল হোসেন পেটাতে শুরু করেন। এতে শফিকুলের শরীরে কাঁপুনি ওঠে। এই অবস্থায় জোর করে আলমসাধু চালাতে বলা হয় শফিকুলকে। চলন্ত অবস্থায় পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সে। পরে রাত ১১টার দিকে তাকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন মিয়া জানান, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সংবাদটি 59 বার পঠিত হয়েছে

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ