শিক্ষা আইন হলো না চার বছরেও

প্রকাশিত: 6:10 AM, February 15, 2016

শিক্ষা আইন হলো না চার বছরেও

109524_untitled_111282প্রান্ত ডেস্ক:চার বছরেও হয়নি শিক্ষা আইন। জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ বাস্তবায়নের জন্য ২০১১ সালে শিক্ষা আইন প্রণয়নের কাজ শুরু হলেও এখনও চূড়ান্ত করতে পারেনি মন্ত্রণালয়। অবশ্য শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইন বলছেন, আগামী একমাসের মধ্যে এই আইন চূড়ান্ত হবে।
শিক্ষক নেতাদের একটি অংশ, নোট গাইড প্রকাশে জড়িত ব্যবসায়ী এবং কোচিং বাণিজ্যে জড়িত শিক্ষকদের বিরোধিতা ও মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতায় শিক্ষা আইন চূড়ান্তকরণে বিলম্ব হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টদের মত। এছাড়া শিক্ষা আইন না থাকায় কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের বেশিরভাগ নির্দেশনা বা নীতিমালা। দেশে শিক্ষায় অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতিসহ নানা ধরনের অপরাধ প্রবণতা ব্যাপক হারে বেড়েছে। এসব অপরাধ রোধে দেশের প্রচলিত আইনে তেমন কার্যকর সুরক্ষা নেই। এর ফলে শিক্ষা সেক্টরে বড় ধরনের অপরাধ করেও প্রচলিত আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করলেও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কার্যত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকরা প্রায়ই উচ্চ আদালতে মামলা করে থাকেন। এসব মামলায় মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন আদেশ ও নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করা হয়। মামলাগুলো লড়তে গেলে আদালত জানতে চান, কোন আইনের ক্ষমতাবলে এ সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হয়েছে। তখন বিভিন্ন বিধিমালার কথা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হলেও আদালতে তা ততটা গুরুত্ব পায় না। কারণ সুনির্দিষ্টভাবে কোনো আইন দেখানো সম্ভব হয় না। এ সব কারণে বেশিরভাগ মামলায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় হেরে যায়। এছাড়া নিষিদ্ধ হলেও দেশে এখনও নোট গাইডের ব্যবসা চলছে। নীতিমালা করে বন্ধ করে দেয়া হলেও স্কুলগুলোতে এখনও চলছে কোচিং বাণিজ্য। প্রকাশ্যে নির্দেশ অমান্য করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন বই ব্যবসায়ী ও শিক্ষকরা। শিক্ষা আইনে নিয়ম না মানাদের বিরুদ্ধে শাস্তির কথা বলা আছে। শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদও বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমকে বলছেন, আইন না থাকায় অনেকে অনিয়ম করেও পার হয়ে যাচ্ছে।
প্রাক-প্রাথমিক থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থাকে আইনি কাঠামোতে আনা এবং সবার জন্য বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক ও মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এর আলোকে ‘শিক্ষা আইন’ প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে এ বিষয়ে প্রথম সভা হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। ওই সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (আইন ও অডিট) আহ্বায়ক এবং শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির কয়েকজন সদস্যকে শিক্ষা আইনের খসড়া তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয়। এই কমিটি ২০১২ সালে শিক্ষা আইনের খসড়া তৈরি করে। পরে নানা তথ্য সংযোজন-বিয়োজন শেষে ২০১৩ সালের ৫ আগস্ট জনমত যাচাইয়ের জন্য শিক্ষা আইনের খসড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। খসড়া আইনের বিষয়ে মতামত দিতে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। খসড়ায় অনিয়মের জন্য শিক্ষকদের শাস্তি ও কোচিং বাণিজ্য বন্ধের বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক সংগঠনসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে আপত্তি ওঠে। শিক্ষকরা এ আইনের বিরুদ্ধে মাঠেও নামেন। আবার ‘শিক্ষানীতি-২০১০ অনুযায়ী শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল চালু, বেতন কর্তন ও সামারি ট্রায়ালে শিক্ষকদের শাস্তি বিধানের ধারা থাকায় এর বিরুদ্ধে নামে শিক্ষক সংগঠনগুলো। এরপর উদ্যোগটি স্তিমিত হয়ে যায়।
খসড়া আইনটির ওপর সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৩৪টি, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৯৪টি ও বিশিষ্ট নাগরিকসহ ব্যক্তি পর্যায়ে ১০৬টিসহ মোট ২৩৪টি মতামত নেয়া হয়েছিল। এরপর ২০১৪ সালে আবারও আইন প্রণয়নে উদ্যোগ নেয় মন্ত্রণালয়। ওই বছরের ২৮ আগস্ট প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন ২০১৪-এর খসড়া পর্যালোচনায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ১০ বত্সর সশ্রম কারাদণ্ড প্রদানের কথা বলা হয়। খসড়া আইনে ৬৭টি ধারা ছিল। এছাড়া অনিয়ম, দুর্নীতিতে জড়িত, ভুয়া সনদে চাকরি এবং সরকারি নির্দেশনা অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মচারীর বেতনের সরকারি অংশ (এমপিও) এবং প্রতিষ্ঠানের এমপিও সাময়িক বন্ধ, আংশিক বা সম্পূর্ণ কর্তন কিংবা বাতিলেরও বিধান রাখা হয়; কিন্তু কর্মশালা ও সভা করেই সময় ক্ষেপণ। দেড় বছর পর পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস বা এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হলে চার বছর সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রেখে ২০১৫ সালে ২০ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে শিক্ষা আইনের খসড়া প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর সমালোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। গণমাধ্যম ও নানা মহল থেকে সমালোচনা আসতে থাকায় এ বিষয়ে ফের সিদ্ধান্ত নিয়ে খসড়া প্রকাশ করা হবে বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়। এরপর আর প্রকাশ করা হয়নি। তবে মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয় একটি সভা করেছে। সভায় পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস বা এর সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণে শাস্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইন) আবদুল্লাহ আল আহসান চৌধুরী বলেন, আমরা আশা করছি দ্রুত এটি চূড়ান্ত করা হবে। তবে এটি আবারো মতামত চেয়ে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে আমরা কেবিনেটে পাঠাবো। এরপর সংসদে এটি পাস হবে। শিক্ষাসচিব সোহবার হোসাইন ‘ইত্তেফাক’কে জানিয়েছেন, একমাসের মধ্যে এটি চূড়ান্ত হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সংবাদটি 50 বার পঠিত হয়েছে

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ