প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা পেল না নির্বাচন কমিশন

প্রকাশিত: 6:05 AM, February 10, 2016

প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা পেল না নির্বাচন কমিশন

109524_untitled_111282প্রান্তডেস্ক:আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে বিধি ভঙ্গ করলে কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের সুযোগ পাচ্ছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দলীয়ভিত্তিতে ইউপি নির্বাচনের আইন প্রণয়নের পর গতমাসে ইসির চূড়ান্ত করা নতুন আচরণ বিধিতে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা যুক্ত করা হয়েছিল। এই বিধান যুক্ত করার পর কমিশন জানিয়েছিল, ‘পৌরসভার মতো ইউপিতেও কমিশন কর্তৃক প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা রাখা হয়েছে। এর ফলে প্রার্থীরা আচরণ বিধি মেনে চলতে বাধ্য হবে।
কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভেটিং হয়ে আসা আচরণ বিধিমালায় ‘কমিশন কর্তৃক প্রার্থিতা বাতিল’ ধারাটি বাদ দেয়া হয়েছে। যদিও প্রথমবার দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত পৌরসভার নির্বাচনে আচরণ বিধিতে ‘কমিশন কর্তৃক প্রার্থিতা বাতিল’ ধারাটি বহাল রয়েছে। জাতীয় সংসদ এবং স্থানীয় সরকারের অন্যান্য নির্বাচনেও প্রার্থিতা বাতিলের সুযোগ রয়েছে কমিশনের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিবালয়ের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, ‘বিধিমালা দুইটি আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভেটিং হয়ে কমিশনে এসেছে। তবে আইনে নেই বলে বিধিমালা থেকে কমিশন কর্তৃক প্রার্থিতা বাতিল বিধানটি বাদ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।’
ইউনিয়ন পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১০-এ আচরণ বিধি লংঘনের জন্য আগে কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা ছিল না ইসির; কিন্তু দলীয়ভিত্তিতে ইউপি নির্বাচনের আইন প্রণয়নের পর ইসির চূড়ান্ত করা নতুন আচরণ বিধিতে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা যুক্ত করা হয়। গত মাসের শেষদিকে আচরণ বিধিমালাটি ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
বিধিমালার ৩২ ধারায় বলা হয়, ‘এই বিধিমালার অন্যান্য বিধানে যা কিছুই থাকুক না কেন, যদি কোনো উত্স থেকে প্রাপ্ত রেকর্ড কিংবা লিখিত রিপোর্ট হতে কমিশনের কাছে প্রতীয়মান হয় যে, চেয়ারম্যান বা সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থী তা তার নির্বাচনী এজেন্ট এই বিধিমালার কোনো বিধান লংঘন করেছেন বা লংঘনের চেষ্টা করেছেন এবং অনুরূপ লংঘন বা লংঘনের চেষ্টার জন্য তিনি চেয়ারম্যান বা ক্ষেত্রমতো, সদস্য নির্বাচন হওয়ার অযোগ্য হতে পারেন, তা হলে কমিশন তাত্ক্ষণিক তদন্তের নির্দেশ প্রদান করতে পারবে। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর যদি কমিশন সন্তুষ্ট হয়, তা হলে তাত্ক্ষণিক লিখিত আদেশ দ্বারা, উক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রর্থিতা বাতিল করতে পারবেন।’ ইউপি থেকে এই বিধান বাদ দেয়া হলেও একই বিধান সদ্য সমাপ্ত পৌরসভা নির্বাচন আচরণ বিধিমালা বহাল রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ইত্তেফাককে বলেন, বিধি প্রণয়নের দায়িত্ব স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের। আইন মন্ত্রণালয় এটা বাতিল করতে পারে না। কমিশনের উচিত সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা বহাল রাখা।
এছাড়াও নির্বাচনী পরিচালনা বিধি লংঘন করলে কোনো রাজনৈতিক দলের ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান বাতিলের জন্য বলা হয়েছে। সেখানে জরিমানার কমানোর কথা বলা আছে। এছাড়াও ভেটিং সম্পন্ন আচরণ বিধিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীরা প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রচারণা চালাতে পারবেন না। প্রতীক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণার সুযোগ পাবেন। পৌরসভায় যেমন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ভোটারদের সমর্থন যুক্ত সই লাগতো, ওই বিধিমালা অনুযায়ী ইউপিতে এটা লাগবে না। এ ছাড়া নির্বাচনে হলফনামা ও ট্যাক্স পেয়ার’স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) দিতে হবে না। উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়ররা সরকারি সুবিধা ছাড়াই প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন। তবে মন্ত্রী-এমপিসহ অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা পারবেন না। বিধিতে জরিমানা-দণ্ডের বিধান আছে।

প্রস্তুতি চূড়ান্ত, যে কোনো সময় তফসিল
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। আজ বুধবার সকালে কমিশন সভায় তফসিল ও নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলী। তিনি জানান, প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে। দুই-একদিনের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করা হবে। আজ আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভেটিং সম্পন্ন বিধিমালা দুইটি অনুমোদন করে এসআরও জারির জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। ওইদিনেই গেজেটের জন্য বিজি প্রেসে পাঠানো হবে।
এদিকে, কত ধাপে কি পরিমাণ ইউপি নির্বাচন হবে, তা এখনো চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে গতকাল প্রথম ধাপের নির্বাচনের জন্য সচিবালয় থেকে একটি সময়সূচি ঠিক করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী, প্রথম ধাপের ভোট ২২ মার্চ, তফসিল ১১ ফেব্রুয়ারি, মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় ২২ ফেব্রুয়ারি, যাচাই-বাছাই ২৩-২৪ ফেব্রুয়ারি, প্রত্যাহার ২ মার্চ, প্রতীক বরাদ্দ ৩ মার্চ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সংবাদটি 33 বার পঠিত হয়েছে

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ