সিলেট [english_date] | [bangla_date]
প্রকাশিত: 4:49 AM, February 2, 2016
প্রান্তডেস্ক: ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন শেরপুরের সংরক্ষিত বনের মধ্যে একটি উচু টিলা। চারদিকে আকাশমনি গাছ। এই টিলাতেই চারটি গর্ত খুঁড়ে মিলল বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারুদ। প্লাস্টিকের ড্রামে ভরে মাটির গর্তে এসব গোলাবারুদ লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। র্যাবের এক অভিযানে পাওয়া এসব গোলাবারুদের অধিকাংশই ব্যবহার উপযোগী। যদিও ঘটনাস্থল দেখে মনে হয়েছে অন্তত ১০ বছর আগে এসব লুকিয়ে রাখা হয়েছে। ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এক সময় এই এলাকা ব্যবহার করত বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের কাছে থাকা গোলাবারুদ এভাবে লুকিয়ে রেখে তারা পালিয়ে যায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঘটনাস্থলটি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার দূর্গম পাহাড়ি এলাকা বুরুঙ্গা-কালাপানি গ্রামের চেংবেইর টিলা বলে পরিচিত। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে পাওয়া গেছে শক্তিশালী ‘এন্টি এয়ারক্র্যাফট মেশিন গান’ বা বিমানবিধ্বংসী কামান। এগুলো দিয়ে গুলি করে বিমান ভূপাতিত করা যায়। এই মেশিনগানের ১২ দশমিক ৭ বোরের আড়াই হাজার গুলিও পাওয়া গেছে। আরো মিলেছে ২টি ‘হেভি মেশিন গান’। এই গানের ৪৩ হাজার গুলি উদ্ধার হয়েছে। এছাড়া অত্যাধুনিক অস্ত্রের মধ্যে স্নাইপার রাইফেল ২টি, একে-৫৪ রাইফেল একটি, ৭ দশমিক ৬৫ বোরের পিস্তল ২টি, দূরে ও কাছে ব্যবহারের জন্য ১১টি ওয়াকি টকি, এন্টি এয়ারক্র্যাফট মেশিন গানের ব্যারেল ২টি, হেভি মেশিন গানের ব্যারেল ৫টি, আগ্নেয়াস্ত্র ক্লিনিং যন্ত্রপাতিসহ আগ্নেয়াস্ত্রের বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জামও মিলেছে ওই গর্তগুলো থেকে।
র্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের পরিচালক লে. কর্ণেল আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ওই আস্তানায় যে ধরনের অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাওয়া গেছে তা মূলত যুদ্ধের সময় ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে ওখানে পাওয়া যাওয়া বিমানবিধ্বংসী কামান তো খুবই ভয়ঙ্কর অস্ত্র। এসব গোলাবারুদের ৯০ শতাংশই ব্যবহার উপযোগী রয়েছে। খুব সচেতনভাবেই যতœ করে গোলাবারুদগুলো রাখা হয়েছিল, যাতে এগুলো সচল থাকে।’
গতকাল সোমবার বিকেলে ঘটনাস্থলেই সাংবাদিকদের ব্রিফিং দেন র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান। তিনি বলেন, ‘র্যাব-৫ এর একটি দল গোপন সূত্রের ভিত্তিতে এখানে অভিযান চালিয়েছে। রবিবার মধ্যরাত থেকে অভিযান শুরু হয়ে প্রাথমিকভাবে শেষ হয় সোমবার বিকালে। সেখানে চারটি গর্ত খুঁড়ে এসব গোলাবারুদ মিলেছে। উদ্ধারকৃত সব অস্ত্রই প্যাকেট করা অবস্থায় মাটির নিচে ছিল। আমাদের অভিযান এখনও শেষ হয়নি। প্রাথমিকভাবে আমরা এগুলো উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। এরপরও অভিযান চলবে। তবে কে বা কারা এবং কি উদ্দেশ্যে এসব আগ্নেয়াস্ত্র এখানে মজুদ করেছে তা এখনো আমরা নিশ্চিত হতে পারেনি। এ বিষয়ে নিয়মিত মামলার পর তদন্ত হবে। এরপরই আমরা নিশ্চিত হতে পারব কারা এগুলো এখানে রেখেছিল।’ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিশেষ করে সাতছড়ি উদ্যান থেকে যেসব ভারি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে তার সাথে এসব আগ্নেয়াস্ত্রের মিল রয়েছে। এসব গোলাবারুদ কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্ত ছাড়া এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে তদন্ত শেষ হলে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এ স্থানটি ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায়। বছর দশেক আগে এখানে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্টের (উলফা) সদস্যরা বিচরণ করত। এসব অস্ত্র তাদেরও হতে পারে। তাদের বেশ কয়েকজন সদস্যকে এখান থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আটক করেছে। উলফার অনেক বড় নেতাও এই এলাকায় অবস্থান করতেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, এর আগে ২০০৭ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে শেরপুরের আরেক উপজেলা ঝিনাইগাতিতে অভিযান চালিয়ে অন্তত ৫০ হাজার গুলি, রকেট, মাইন ও বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র উদ্ধার করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া ২০১২ সালে নালিতাবাড়ির এক গ্রাম থেকে উদ্ধার করা হয় একে-৪৭ রাইফেলসহ বিপুল পরিমান গুলি। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের সাতছড়ি উদ্যানে গর্ত খুঁড়ে বিপুল পরিমান গোলাবারুদ পাওয়া যায়। এরপর সেখানে থেকে ৫ দফায় আরো গোলাবারুদ উদ্ধার করে র্যাব।
চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অমূল্য কুমার চৌধুরী জানান, ওই অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের ঘটনায় ৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এগুলোর সঙ্গে কারো সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় গত বছর সিআইডির হবিগঞ্জের এএসপি বসু দত্ত চাকমা আদালতে মামলাগুলো চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন।
সম্পাদক-প্রকাশক :
মো: মিজানুর রহমান।
সম্পাদকীয় কার্যালয়:
পৌর মিনি মার্কেট (২য় তলা). ডিএস রোড সুনামগঞ্জ।
মোবাইল : ০১৭১৬-৫৬৩১৬৮
ইমেইল : mizan.sunam@gmail.com
ওয়েব সাইট: www,sunamnews24.com