সিলেট [english_date] | [bangla_date]
প্রকাশিত: 6:38 AM, January 25, 2016
ন্তডেস্ক: অর্থনীতিবিদ, কূটনীতিক, ভাষাসৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ৮৩তম জন্মদিন আজ। ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিক সদস্যদের কাছে তিনি ‘শিশু’ নামে পরিচিত।
পাকিস্তান আন্দোলনের অন্যতম নেতা, তৎকালীন সিলেট জেলা মুসলিম লীগের কর্ণধার অ্যাডভোকেট আবু আহমদ আব্দুল হাফিজের দ্বিতীয় পুত্র তিনি। তার মা সৈয়দ শাহার বানু চৌধুরীও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।
মুহিত ছাত্রজীবনে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তিনি ১৯৫১ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে আইএ পরীক্ষায় প্রথম স্থান, ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বিএ (অনার্স) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম এবং ১৯৫৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এমএ পাস করেন। চাকরিরত অবস্থায় তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নসহ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমপিএ ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস (সিএসপি)-এ যোগদানের পর মুহিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, কেন্দ্রীয় পাকিস্তান এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে তিনি পরিকল্পনাসচিব এবং ১৯৭৭ সালে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগে সচিব পদে নিযুক্ত হন।
তিনি পাকিস্তান পরিকল্পনা কমিশনের চিফ ও উপসচিব থাকাকালে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্যের ওপর ১৯৬৬ সালে একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন করেন এবং পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে এটিই ছিল এ বিষয়ে প্রথম প্রতিবেদন। ওয়াশিংটন দূতাবাসের তিনি প্রথম কূটনীতিক, যিনি স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ১৯৭১-এর জুন মাসে পাকিস্তানের পক্ষ পরিত্যাগ করে বাংলাদেশের পক্ষে আনুগত্য প্রদর্শন করেন।
অর্থনৈতিক কূটনীতিতে মুহিত সবিশেষ পারদর্শী। বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় তিনি পরিচিত ব্যক্তিত্ব। ১৯৮১ সালে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে তিনি অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে ফোর্ড ফাউন্ডেশন ও ইফাদ-এ কাজ শুরু করেন। ১৯৮২-৮৩ সালে অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর তিনি বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে তিনি প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং ফেলো ছিলেন।
লেখক হিসেবে আবুল মাল আবদুল মুহিত সমান পারদর্শী। প্রশাসনিক ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গ্রন্থ ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে তার ২১টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে তিনি আত্মজীবনী লিখছেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) তিনি একজন পথিকৃৎ এবং বাপার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
স্ত্রী সৈয়দ সাবিয়া মুহিত ডিজাইনার। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে প্রথম কন্যা সামিনা মুহিত ব্যাংকার ও আর্থিক খাত বিশেষজ্ঞ, বড় ছেলে সাহেদ মুহিত বাস্তুকলাবিদ এবং কনিষ্ঠ পুত্র সামির মুহিত শিক্ষকতা করেন। আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বার এবং ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি তৃতীয়বারের মতো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী নিযুক্ত হন।
অর্থমন্ত্রীর কাছে তার ৮৩তম জন্মদিনের অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ৮২ বছর পূর্ণ করে ৮৩-তে পা রাখছি, এটা আমার জন্য অত্যন্ত সৌভাগ্যের। দেশের সেবা করতে পারছি, কর্মক্ষম আছি। এটা মহান আল্লাহ তাআলার অশেষ কৃপা। এ বয়সে যখন মানুষ কর্মক্ষমতা হারান, তখনো দিব্বি কাজ করে যাচ্ছি। এর চেয়ে বেশি আর কিছু পাওয়ার থাকতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি না। আল্লাহ তাআলার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এ বয়সে কাজ করতে সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার জন্য আমি বিশেষভাবে বঙ্গবন্ধু কন্যা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাব। তিনিই আমাকে দেশ সেবার সুযোগ করে দিয়েছেন।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমার জন্মদিন উপলক্ষে আমার সব সহকর্মী, সিলেটের সর্বস্তরের জনগণ ও দেশবাসীর কাছে আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমাকে সমর্থন দেওয়ার জন্য। কারণ তাদের সমর্থন আমাকে কর্মক্ষম রেখেছে।’
মুহিত বলেন, ‘আমি সব সময় চেষ্টা করি দেশ ও দেশের মানুষের মঙ্গল হয় এমন কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে। অনেক সময় এর ব্যত্যয় হয়। অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অনেক সময় যা করতে চাই তা করা হয়ে ওঠে না। তবে আমার আন্তরিকতার অভাব নাই।’
মুহিত আরো বলেন, ‘এখনো আমার মস্তিষ্ক ঠিক আছে। তবে মাঝেমধ্যে অনেক কিছু ভুলে যাই। শারীরিকভাবে মাঝেমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ি। এটাও বয়সের ভারে হয়। আর এ বাস্তবতা মানতেই হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমার অনেক দোষ-ত্রুটি থাকতেই পারে। এ কারণে দেশের মানুষ আমাকে গালিগালাজও করে, সে কথা আমি জানি। তবে সবচেয়ে বড় সত্য হচ্ছে, দেশের মানুষ আমাকে অনেক ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা না পেলে আমি এতদিন কাজ করতে পারতাম না। জনগণের ভালোবাসা আমার কাজে অনুপ্রেরণা জোগায়। জনগণের পাশাপাশি আমি আমার পরিবারের সদস্যদের কাছেও কৃতজ্ঞ। তারা সহযোগিতা না করলে আমার পক্ষে কাজ করা সম্ভব হতো না। তারা কোনো সময় আমার কাজে বিরক্ত করে না। এ নিয়ে আমি অত্যন্ত স্বস্তিতে কাজ করতে পারছি।’
৮৩তম জন্মদিনে তার প্রত্যাশা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার দুটি প্রত্যাশা আছে। প্রথমত, আমি যেন জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জনগণ ও দেশের সেবা করে যেতে পারি। দ্বিতীয়ত, আমি যেন ভুক্তভোগী হয়ে বা বিছানায় পড়ে মারা না যাই।’
সম্পাদক-প্রকাশক :
মো: মিজানুর রহমান।
সম্পাদকীয় কার্যালয়:
পৌর মিনি মার্কেট (২য় তলা). ডিএস রোড সুনামগঞ্জ।
মোবাইল : ০১৭১৬-৫৬৩১৬৮
ইমেইল : mizan.sunam@gmail.com
ওয়েব সাইট: www,sunamnews24.com