কূটনীতিক :প্রত্যাহার ঢাকা-ইসলামাবাদ বৈঠক অনিশ্চিত

প্রকাশিত: 6:32 AM, January 7, 2016

কূটনীতিক :প্রত্যাহার ঢাকা-ইসলামাবাদ বৈঠক অনিশ্চিত

00প্রান্তডেস্ক: পালটাপালটি কূটনীতিক প্রত্যাহারের ঘটনায় ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্কে চরম টানাপড়েন চলছে। পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় নিয়মিত কার্যক্রমেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, কোনো অভিযোগ ছাড়া বাংলাদেশি কূটনীতিক মৌসুমী রহমানকে পাকিস্তান ছাড়তে বাধ্য করায় দেশটির সঙ্গে আসন্ন পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনিশ্চয়তায় পড়েছে। দীর্ঘদিনের আলোচনার প্রেক্ষিতে আগামী মাসে ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ফরেন অফিস কনসালটেশন বা এফওসি’র বৈঠক ঠিক হয়েছিল। এ বৈঠকে নেতৃত্ব দিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফরের কথা ছিল। জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে পাকিস্তানি কূটনীতিক প্রত্যাহারের জেরে বাংলাদেশি কূটনীতিক মৌসুমী রহমানকে প্রত্যাহারের সময়সীমা বেঁধে দেয়ার প্রতিবাদ হিসেবে ঢাকা ওই বৈঠকটি বাতিল করতে পারে! এদিকে বাংলাদেশি কূটনীতিককে ফেরত নিতে বাধ্য করার ঘটনাকে পাকিস্তানের বাড়াবাড়ি হিসেবেই দেখছে বাংলাদেশ। এ ঘটনা দুই দেশের সম্পর্কের জন্য সহায়ক নয় বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি। গতকাল নিজ দপ্তরে গণমাধ্যমের কয়েকজন প্রতিনিধির কাছে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। কূটনীতিক মৌসুমী রহমানকে কেন প্রত্যাহার করতে হবে এর কোনো ব্যাখ্যা পাকিস্তান দিতে পারেনি। এ সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, কূটনৈতিক দায়মুক্তির (ডিপ্লোমেটিক ইমপিউনিটি) সুযোগ নিয়ে কাউকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে দেয়া হবে না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মঙ্গলবার বিকালে ইসলামাবাদে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সোহরাব হোসেনকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠানো হয়। হাইকমিশনের কাউন্সিলর (রাজনৈতিক) মৌসুমী রহমানকে সঙ্গে নিয়ে সোহরাব হোসেন মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (দক্ষিণ এশিয়া ও সার্ক) মোহাম্মদ ফয়সালের সঙ্গে দেখা করতে যান। এ সময় মোহাম্মদ ফয়সাল বৃহস্পতিবার বিকালের মধ্যে মৌসুমী রহমানকে ইসলামাবাদ থেকে প্রত্যাহার করে নিতে বলেন। কিন্তু মৌসুমী রহমানকে বাংলাদেশ কেন ফিরিয়ে নেবে, সে সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তিনি।
ফারিনা আরশাদ প্রসঙ্গ: প্রায় ৬ মাস ধরে নজরদারিতে থাকা পাকিস্তানি কূটনীতিক ফারিনা আরশাদকে ফিরিয়ে নিতে ইসলামাবাদকে বলে ঢাকা। গত ২৩শে ডিসেম্বর ঢাকার বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যেই তাকে ফিরিয়ে নেয় ইসলামাবাদ। সেই সময়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে পাকিস্তানি কূটনীতিক ফারিনা আরশাদকে ঢাকায় হেনস্থা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে। এ ছাড়া গণমাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ধারাবাহিকভাবে তার বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অপপ্রচার চালানো হয়েছে উল্লেখ করে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, এসব ঘটনার প্রতিবাদে ইসলামাবাদস্থ বাংলাদেশ দূতকে দু’দফা তলব করা হয়। ঘটনার এক পর্যায়ে ঢাকা থেকে ফারিনাকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় ইসলামাবাদ। কূটনীতিক ফারিনাকে প্রত্যাহারের প্রেক্ষিতে ইসলামাবাদ কোনো একজন বাংলাদেশি কূটনীতিককে ফেরত পাঠাতে পারে এমন আশঙ্কা ছিল ঢাকার। ওই ঘটনার সময় পাকিস্তানে নিযুক্ত হাইকমিশনার সোহরাব হোসেন ছুটিতে ঢাকায় ছিলেন। ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার হিসেবে কূটনীতিক মৌসুমী রহমান পুরো বিষয়টি সফলতার সঙ্গে সামলে ওঠেছিলেন। পাকিস্তান প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে কাউকে ফেরত পাঠালে মৌসুমী রহমানকে টার্গেট করতে পারে এমন শঙ্কায় ইউরোপের একটি দেশে তার তাৎক্ষণিক পদায়নের চিন্তা করেই রেখেছিলেন নীতিনির্ধারকরা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পাকিস্তানের সিদ্ধান্ত জানার পর মৌসুমী রহমানকে ঢাকায় না ফিরিয়ে পর্তুগালে বদলির অর্ডার ইস্যু করা হয়। মঙ্গলবার রাতে (১০টার দিকে) ঢাকার এ সিদ্ধান্ত পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেয়া হয়। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে বলেন, মৌসুমী রহমানের মতো একজন পেশাদার কূটনীতিকের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের এমন আচরণ অত্যন্ত দুঃখজনক। উদভূত পরিস্থিতিতে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় ঢাকা সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, রাত ৯টার দিকে মৌসুমী রহমানের অর্ডার ইস্যু করা হয়েছে। তাকে ঢাকায় না এনে সরাসরি লিসবনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগ দিতে বলা হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা মতে গতকাল বিদায়ের সফর প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাতেই লিসবনের পথে রওনা হয়েছেন বলে ঢাকায় একটি গণমাধ্যমে মৌসুমী রহমান নিজেই নিশ্চিত করেছেন।
মাযহার ও অন্যান্য প্রসঙ্গ: বিদায়ী বছরে ঢাকার নির্দেশনা মতে ফারিনাসহ দু’জন পাকিস্তানের কর্মকর্তাকে ফিরিয়ে নেয় পাকিস্তান। জঙ্গিদের অর্থায়নের অভিযোগে গত বছরের জানুয়ারিতে বনানী থেকে গ্রেপ্তার হন হাইকমিশনের কন্স্যুলার কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাজহার খান। হাইকমিশন মুচলেকা দিয়ে তাকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নেয়। এরপর ইসলামাবাদে তাকে ফেরত নেয় বাংলাদেশের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে। উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরুর পর থেকে টানাপড়েনের মধ্য দিয়েই যাচ্ছে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দণ্ড দেয়ায় পাকিস্তান ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার বক্তৃতা-বিবৃতি দেয়া দেয়া ছাড়াও দেশটির জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নিন্দা প্রস্তাব এনেছে। প্রতিটি ঘটনার কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। এসব ঘটনা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তানের নাক গলানোর শামিল মন্তব্য করে তা বন্ধে দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু পাকিস্তান তা না করে সর্বশেষ দেয়া বিবৃতিতে বাংলাদেশে চালানো গণহত্যা অস্বীকার করেছে। পাকিস্তানের এমন অবস্থানে দলমত নির্বিশেষে গোটা বাংলাদেশ থেকে নিন্দা জানানো হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সংবাদটি 82 বার পঠিত হয়েছে

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ