প্রান্ত ডেস্ক:১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১৯৫ জন সেনা কর্মকর্তার যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে চায় সরকার। এই জন্য বিদ্যমান আইনে সেটা সম্ভব, না আইনে কোনো সংশোধনী আনতে হবে সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখছে সরকার। প্রয়োজন হলে আইনে সংশোধনীও আনা হতে পারে।
সাম্প্রতিককালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থান ও ওই সময়ের ঘটনার জন্য তাদের অনুতপ্ত না থাকা এবং বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ডেকে পাঠানো, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুহম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর পাকিস্তান তাদের পক্ষ নেওয়ায় ও বিচারকে ত্রুটিপূর্ণ বলে অভিহিত করে। এই অবস্থায় সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেই বিষয়টি নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করে।
কিন্তু পাকিস্তান এই ব্যাপারে নমনীয় ও অনুতপ্ত নয়। এই কারণেই সরকার ওই সময়ের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে প্রমাণ করতে চাইছে আজকের পাকিস্তানের অবস্তান ভুল।
সূত্র জানায়, পাকিস্তানের যেসব সেনা কর্মকর্তারা ‘৭১-এ মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদের বিচার ওই সময়ে করা হয়নি। পাকিস্তান তাদের দেশে নিয়ে তাদের আইনে বিচার করবে সেই রকম আশ্বাস দিয়ে চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তান পরে আর তাদের বিচার করেনি।
অ্যাডভোকেট তুরিন আফরোজ গণমাধ্যমে বলেছেন, ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধে যেসব পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন তাদের বিচার আমাদের প্রচলিত আইনে সম্ভব। তাদের যে অপরাধ ওই অপরাধের বিষয়টি উল্লেখ করে ও এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তদন্ত শেষ করে এবং সেই হিসাবে সাক্ষ্য-প্রমাণ জোগাড় করে এই ব্যাপারে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে হবে। পরে তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করে বিচার করতে হবে।
পাকিস্তান যদিও বলেছিল, তারা তাদেরকে নিজ দেশে নিয়ে বিচার করবে। কিন্ত করেনি। তারা বিচার না করলেও আমাদের এখন সময় হয়েছে ওই ঘটনার বিচার করার।
তিনি বলেন, কেউ কেউ চুক্তির বিষয়টি বলতে পারেন কিন্তু চুক্তির বিষয়টি হলো চুক্তি। ওটা আমাদের জন্য আইন নয়। যখন কোনো চুক্তির বিষয় আমরা সংসদে নিয়ে এসে পাস করব তখন সেটা আমাদের জন্য আইন হবে। কিন্তু, ওই বিষয়টি আমাদের জন্য আইন নয়। এই কারণে বিচারে কোনো বাধা নেই।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে যেসব পাকিস্তান সেনা কর্মকর্তা জড়িত ছিল ওই সব কর্মকর্তার বিচার আমাদের আইনে করা সম্ভব। ওই সময়ে অপরাধ করেছে এই জন্য এখনও যারা জীবিত আছে তাদের বিচার করতে হবে। আর যারা মারা গেছে তাদের বিচার করা যাবে না। এই বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুরু হবে। আর তাদের এখানে বিচারের জন্য উপস্থিত থাকতে হবে বিষয়টি তা নয়, অনপুস্থিতিতেই বিচার করা সম্ভব। সরকার বিচার করতে পারে। আমার মনে হয়, ওই সব কর্মকর্তার বিচার করা উচিত।
এই ব্যাপারে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘৭১ সালে যুদ্ধাপরাধী ১৯৫ জন পাকিস্তান সেনা কর্মকর্তার বিচারের বিষয়টি এখন সামনে চলে এসেছে। কেউ কেউ এই ব্যাপারে কথাও বলতে শুরু করেছেন। প্রসিকিউটর ও সাবেক আইনমন্ত্রীও এই ব্যাপারে ব্যাখ্যা করেছেন। বিষয়টি আমি জেনেছি। আমরা ওই কর্মকর্তাদের বিচার করার জন্য আইনি দিকগুলো খতিয়ে দেখছি। আইন পর্যালোচনা করে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এটা কি সম্ভব হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আশা করা যায় হতে পারে। তবে এখনও যেহেতু এই ব্যাপারে আমরা আমাদের আইনের পর্যালোচনা শেষ করিনি তাই পুরোপুরি বলা যাবে না। সেই সঙ্গে আবার এটাও বলতে হচ্ছে যে, শেষ পর্যন্ত সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে কি সিদ্ধান্ত আসে সব দিক বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এই সংবাদটি 71 বার পঠিত হয়েছে