এক কিংবদন্তীর জন্মদিনে..

প্রকাশিত: 5:34 AM, November 17, 2015

এক কিংবদন্তীর জন্মদিনে..

MMC11-300x199ইমন সাহা: আজ বাংলাদেশের কিংবদন্তী শিল্পী রুনা লায়লা’র জন্মদিন। বরেণ্য এই শিল্পী ১৯৭৪ সালে সত্য সাহার সুর ও সঙ্গীতে ‘জীবন সাথী’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রথম প্লে-ব্যাক করেন। ‘আমার মন বলে তুমি আসবে’, ‘বাড়ির মানুষ কয় আমায়’, ‘বন্ধু তিন দিন তোর’, ‘সাধের লাউ বানাইলো মোরে’, ‘শিল্পী আমি তোমাদেরই গান শোনাবো’, ‘যখন থামবে কোলাহল’, ‘যখন আমি থাকবো নাকো’, ‘এই বৃষ্টি ভেজা রাতে’, ‘সুজন মাঝি রে’ ইত্যাদি অগণিত গানে সমৃদ্ধ করেছেন বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনকে। শিল্পীর জন্মদিনে শুভেচ্ছাস্বরূ লিখেছেন সত্য সাহা’র ছেলে ইমন সাহা।
রুনা আন্টির জন্মদিনে তাকে শুভেচ্ছা জানানোর এই পত্রে ঠিক কোত্থেকে যে শুরু করবো বোঝা মুশকিল। কারণ আমার জীবনে বাবা তো আছেনই, তবে গানের সাথে প্রেম বা গানটাকে যে এ রকমভাবে ভালোবাসা যায় এই বোধটা কাজ করেছিল যার গানটি দিয়ে, তিনি আমাদের কিংবদন্তী শিল্পী রুনা লায়লা। দিনক্ষণ মনে নেই, গাজী চাচা (গাজী মাজহারুল আনোয়ার)’-এর লেখা আর বাবার সুরে রুনা আন্টি ‘আনারকলি’ ছবিতে গেয়েছিলেন ‘আমার মন বলে তুমি আসবে’। জানি না কেন এ গানের সুরটা আমার ভেতরে এক ঘোর তৈরি করে। অদ্ভুত এক ভালোলাগা তৈরি করে। আমি এই গান শোনার পর বাবার গানের আসরে অবাক হয়ে চেয়ে থাকতাম, বুঝতে শিখলাম বাবা অসাধারণ কিছু সৃষ্টি করেন তার এই ঘরে। যা গাইলেই বা শুনলেই কেমন অদ্ভুত ভালো লাগে! হেড ফোনের এতো প্রচলন ছিল না বা ব্যবহার ছিল না তখন। কিন্তু অদ্ভুত এক ঘোর লাগা থেকেই গানটি বারবার শুনতাম। আর বাবার সুরে রুনা আন্টির কোনো রেকর্ডিং-এ অবাক বিষ্ময়ে চেয়ে থাকতাম। কি করে একটা মানুষ এতো অসাধারণ কণ্ঠে গাইতে পারে। সেই আমার গানের ভেতরে প্রবেশ। এরপর একটু একটু করে নেশায় পড়া।
সম্ভবত ১৯৯৮ সাল । আমার ফিল্ম রেকর্ডিংয়ের কম্পোজিশন। রুনা লায়লা-এন্ড্রু কিশোরের একটি গান বাঁধবো ‘মনে রেখো আমায়’ চলচ্চিত্রের জন্য।
বাবা রুনা আন্টিকে ফোন করে বললেন, ‘এক বিশাল মিউজিক ডিরেক্টর তোমার সাথে কথা বলবে। তোমার জন্য গান বেঁধেছে সে।’ টেলিফোনে বাবার এই বিশাল মিউজিক ডিরেক্টর শুনেই আন্টি বুঝে গেলেন কার কথা বলছেন উনি। পরে আমি ফোনে কথা বললাম। অবাক ব্যাপার হলো পারিবারিকভাবে অনেক আড্ডা, গল্প হয়েছে। কিন্তু সেই ফোন কলে আমি এক কিংবদন্তী শিল্পীর সাথে কথা বললাম। তিনিও ঠিক একজন মিউজিক ডিরেক্টরের সাথে কথা বলার ঢঙেই আলাপ করলেন। আবারও অবাক হলাম এই অসাধারণ পেশাদারিত্ব দেখে। এ কারণেই আন্তর্জাতিকমানের একজন শিল্পী তিনি । এরপর রেকর্ডিং অবধি ঠিক শিল্পী-মিউজিক ডিরেক্টর সম্পর্কের চলাচল। আবার হয়তো কোনো ঘরোয়া আড্ডা, তখন তিনি আমার শ্রদ্ধার ‘রুনা আন্টি’। এই অসাধারণ সম্পর্কের জের ধরেই প্রায় অর্ধশত গান করে ফেললাম। আরেকটি বিষয় আমার জীবনের আরেক ভালোলাগা এবং অর্জন বলে মনে করি। তা হলো, বাবা সত্য সাহার সুরে ১৯৭৪-এ ‘জীবন সাথী’ নামের চলচ্চিত্রে রুনা লায়লা প্লে-ব্যাক শুরু করেছিলেন। একাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন। একইসাথে গত বছরে ‘দেবদাস’ ছবিতে আমার কম্পোজিশনে গান গেয়ে রুনা লায়লা আরও একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এটা একজন সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে আমার ভেতরে অন্য এক ভালোলাগা কাজ করে। গর্বে মাথা উঁচু হয়ে যায়, যখন আন্তর্জাতিকমানের একাধিক শিল্পী রুনা লায়লাকে গুরু মেনে তার পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নেন। ভালো লাগে যখন বিশ্বখ্যাত মিডিয়াগুলোতে বাংলাদেশের শিল্পী রুনা লায়লাকে নিয়ে গর্বিত অক্ষরে ফিচার ছাপেন। তখন সশ্রদ্ধ ভালোলাগাটা এভাবে অনুভূত হয় যে, তিনি আমার রুনা আন্টি, আমাদের রুনা লায়লা, যার একাধিক গান করার আমি সুযোগ পেয়েছি। আজ আন্টি আপনার জন্মদিনে অনেক অনেক গর্বিত শব্দস্বরে বলি ‘শুভকামনা’। আমাদেরকে বারবার সুরের অহঙ্কার দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা। দেশের বাইরে গেলেই যেমন নিজের পরিচয়ে বলি, ‘আমি আমাদের দেশের বিশ্বখ্যাত রুনা লায়লার সঙ্গীত পরিচালক।’ এ সম্মান আপনার জন্য। যেভাবে প্রতিনিয়ত সম্মানিত করে চলেছেন আপনি এই দেশকে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই সংবাদটি 86 বার পঠিত হয়েছে

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ